‘দুইটাকে ফেলে দিয়েছি আর কারো সাহস থাকলে আসো’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের সেনেহারি মধ্যপাড়া গ্রামে বসতভিটার রাস্তা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদের ঘটনায় বিরোধী পক্ষের বাসিলা ও লাঠি-সোটার (দেশীয় অস্ত্র) আঘাতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এক গৃহবধূ। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে ঐ গৃহবধূসহ তার স্বামী ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহতরা হলেন, মোছা: মেহেরুন (২৫) ও তার স্বামী মো: জাহাঙ্গীর আলম (২৮)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ মেহেরুন এর দেবর ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহসানুল বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় তার ভাই জাহাঙ্গীর শুক্রবার (৬ জুলাই) সকালে পাওয়ার ট্রলি নিয়ে বাহিরে যায় এবং কিছু সময় পর সকাল সাড়ে ৯টায় গাড়ি নিয়ে আবার বাসায় ফিরে দেখে তাদের বাড়ীর চলাচলের একমাত্র রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিচ্ছে এলাকার মেম্বার আসিরউদ্দিন গং।

এসময় জাহাঙ্গীর এতে বাঁধা দিতে গেলে চাচাতো ভাই ফজলু, সফিরুদ্দিন, সামসুদ্দিন, আব্দুল করিম, সফিরুদ্দিনের ছেলে মানিক ও ওসমান এবং মেম্বার আসিরুদ্দিনের ছেলে বেলাল তাকে দা, বাসিলা ও লাঠিসোটা দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় তার ট্রলিটিও ভাংচুর করা হয়।

এদিকে স্বামীর মার খাওয়া দেখে স্ত্রী মেহেরুন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও বাসিলা দিয়ে মাথায় আঘাত করাসহ তার তলপেটে লাথি মারে বিরোধীপক্ষরা। এসময় আসিরউদ্দিন গং তাদের দুজনকে মারার পর উল্লাস করে ও বলতে থাকে ‘দুইটাকে ফেলে দিয়েছি আর কারো সাহস থাকলে আসো।’ পরবর্তীতে তারা স্থান ত্যাগ করলে পরিবারের অন্য সদস্যরা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে দেখা যায় আহত মেহেরুন কথা বলতে পারছে না, শুধু ইশারায় তার আঘাতের জায়গাগুলো দেখিয়ে দেয়। রোগীর সাথে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা জানায় মেহেরুন ২মাসের অন্তঃস্বত্তা, তার তলপেটে আঘাত করায় অনবরত ব্লিডিং হচ্ছে এবং বাসিলার আঘাতে গুরুতর জখম হওয়ায় তার মাথায় আঠারোটি শেলাই করেছে ডাক্তার। অপরদিকে পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বেডে কাতরাচ্ছেন হামলার প্রথম শিকার জাহাঙ্গীর।

এ ব্যাপারে জানতে মেম্বার আসিরউদ্দিন গং এর সাথে যোগাযোগ করা হলে দু’মিনিট পরে কথা বলতে চেয়ে পরে আর ফোন রিসিভ করেননি তিনি। রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি প্রদীপ কুমার রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে তদন্ত অফিসার প্রেরণ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তবে আহত জাহাঙ্গীরের বড়ভাই আজিজুল জানান, গত তিন বছর ধরে তাদের সাথে আসিরউদ্দিন মেম্বারদের চলাচলের রাস্তা নিয়ে দ্বন্দ চলে আসছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার শালিস বৈঠক বসে কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। সর্বশেষ তারা আমার ভাই ও ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা বউকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে মাথায় বাসিলা দিয়ে আঘাত করেছে। এমনকি তাদের সুষ্ঠ সেবা না পাওয়ার লক্ষে অর্থের বিনিময়ে হাসপাতাল থেকে দ্রুত রিলিজের ব্যবস্থাও করে আসামী পক্ষ। আমরা ন্যায় বিচারের আশায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।